১ নভেম্বর: ত্রিপুরার জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আগরতলা - আখাউড়া রেলওয়ে সংযোগের শুভ উদ্বোধন হলো। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ আগরতলার সচিবালয়ে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
আগরতলা- আখাউড়া রেল প্রকল্প ছাড়াও এদিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হওয়া অন্য দুটি প্রকল্প হচ্ছে খুলনা - মংলা বন্দর রেল লাইন এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ২ নম্বর ইউনিট। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, ডোনার মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডিও।
আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগের উদ্বোধনের পর সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা ত্রিপুরার জনসাধারণের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আজ ত্রিপুরা ও ত্রিপুরাবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কারণ এদিনই আগরতলা-আখাউড়া রেলওয়ে সংযোগের উদ্বোধন হয়েছে। আর এই দিনটি ত্রিপুরার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷
ডা: সাহা বলেন, দুই দেশের মধ্যে রেল সংযোগ চালু হওয়ার সাথে সাথে ত্রিপুরা পরিবহন ও পর্যটনের প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে। এছাড়াও আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ চালু হওয়ার ফলে রেলপথে আগরতলা ও কোলকাতার মধ্যেকার দূরত্ব ১৬০০ কিলোমিটার থেকে কমে এখন ৫০০ কিলোমিটার হবে। ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন আগরতলা- আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্প। রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর হিরা মডেল বাস্তবায়িত হচ্ছে। অমৃত ভারত স্টেশন স্কিমের অধীনে সারা দেশে ৫০৮টি রেলওয়ে স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তর-পূর্বে ত্রিপুরায় তিনটি সহ ৯১টি রেলস্টেশন রয়েছে। ধর্মনগর, কুমারঘাট এবং উদয়পুর - রাজ্যের এই তিনটি স্টেশনের পুনর্নির্মাণে প্রায় ৯৬.৬০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এর পাশাপাশি আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এজন্য আর্থিক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর-পূর্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে এখন প্রায় ১৯টি ট্রেন চলাচল করছে। যার মধ্যে ১৩টি এক্সপ্রেস ট্রেন, ৫টি ডেমু ট্রেন এবং একটি লোকাল ট্রেন রয়েছে৷ ২০১৬ সাল থেকে ত্রিপুরায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে শুরু করে। আর এখন আমাদের রাজ্য দেশের মূলধারার সাথে সংযুক্ত। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
ডাঃ. সাহা জানান, যে আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে ত্রিপুরায় ৫.৪৬ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে ৬.৭৬ কিলোমিটার। এজন্য মোট ৯৭২ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। এরমধ্যে ভারতীয় অংশের জন্য বরাদ্দ ৫৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশের অংশের জন্য ৩৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ভারতের অংশে রেল সড়ক সম্প্রসারনের দায়িত্বে ছিল ইরকন (IRCON) এবং বাংলাদেশের দায়িত্বে ছিল টেক্সমাকো (TEXMACO) নির্মাণ সংস্থা। এখন রেল সংযোগ চালু হওয়ায় উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মহাকরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, তথ্য সংস্কতি দপ্তরের সচিব প্রদীপ চক্রবর্তী, পরিবহন দপ্তরের সচিব ইউ কে চাকমা সহ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ।