২৩ আগস্ট: ঝড় বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিনিয়ত দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করছেন। ২২ আগস্ট, ২০২৪ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে খবর আসে রতননগর আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির এলাকার থামনি পাড়ার প্রত্যন্ত এলাকার ২০ বছর বয়স্ক এক গর্ভবতী মহিলা প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের এলাকাটি ছিল খুবই দুর্গম। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধ্বস ও বন্যা পরিস্থিতিতে গর্ভবতী-মাকে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে আনতে পারছিলেন না। এই খবরের ভিত্তিতে দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক দ্রুত একটি মেডিকেল টিম গঠিত করে গর্ভবতী মহিলার বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এই এলাকায় পৌঁছতে গেলে তুইচাকমা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতে হয়। কারণ, এই দূরবর্তী স্থানে বৃষ্টিপাত ও ভূমিধ্বস জনিত পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার সুবিধা ছিল না। তাই দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ অজিত ত্রিপুরা-র নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল টিমটি পায়ে হেঁটেই গর্ভবতী মহিলার বাড়ির দিকে রওনা দেন। তারপর ভারী বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল পথে পায়ে হেঁটে অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে মেডিকেল টিম শেষ পর্যন্ত গর্ভবতী মহিলার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান। তারপর ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ অজিত ত্রিপুরা গর্ভবর্তী মহিলার সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাড়িতেই দ্রুত গর্ভবতী মহিলার প্রসবের সিদ্ধান্ত নেন। মেডিকেল টিমের সদস্যদের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এদিনই দুপুর ২.৪০ মিনিট নাগাদ সফলভাবে একটি ফুটফুটে কন্যা শিশুর স্বাভাবিক প্রসব করান। শিশুটি ছিল মহিলার প্রথম শিশু। শিশুটির ওজন ছিল ২.৯ কেজি। প্রসবের পর মা ও শিশু দুজনেই বর্তমানে সুস্থ আছে। গর্ভবতী মা ও শিশুটিকে বিনামূল্যে ওষুধ এবং পথ্য দেওয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ অজিত ত্রিপুরা গর্ভবতী মা সহ পরিবারের অন্যান্যদের নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যায় কি কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেন। উল্লেখ্য উক্ত মেডিকেল টিমে ছিলেন দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ অজিত ত্রিপুরা সহ কমিউনিটি হেলথ অফিসার (সিএইচও) মোঃ আমেদউদ্দীন, মাল্টি পারপাস ওয়ার্কার (এমপিডব্লিউ) কৃপাল মৈশান, খরেন জয় ত্রিপুরা ও রিপণ শীল এবং এলাকার আশাকর্মী সোনাবতী ত্রিপুরা প্রমুখ। এই রকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চিকিৎসকদের এই ধরনের সাহসী পদক্ষেপ ও সাহায্য না পেলে গর্ভবতী মহিলাটির অবস্থা আরও সংকটজনক অবস্থায় চলে যেত। দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সহ সমস্ত মেডিকেল টিমের সদস্যদের এই ভূমিকার প্রশংসায় মুখর আত্মীয় পরিজন সহ এলাকার জনগণ।
অপরদিকে সংকটজনক অবস্থায় গর্ভবতী মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনার পর অস্ত্রোপচার করে সন্তানের প্রসব করালেন চিকিৎসকরা। বিলোনিয়া মহকুমা হাসপাতালে রাত একটা নাগাদ এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন হাসপাতালে চিকিৎসকরা। চোত্তাখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ওই রোগীনির উচ্চ রক্তচাপ ছিল এবং তার জরায়ুতে জল ভেঙে গিয়েছিল। ২২ আগস্ট বিকেল চারটা নাগাদ ওই গর্ভবতী মহিলাকে চোত্তাখলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিলোনিয়া মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু রাস্তায় বড়পাথরী এলাকাতে বন্যার জলে আটকে পড়ে তারা। ঘটনার খবর পেয়ে এনডিআরএফ টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। সাড়ে সাতটা নাগাদ রোগীনিকে বিলোনিয়া মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছাতে সক্ষম হয় তারা। তাদের উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ও অস্ত্রোপচার দ্রুত সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন জেলাশাসক স্মিতা মল, এসিস্ট্যান্ট কালেক্টর কৃষ্ণ কুমার গুপ্তা, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুব্রত দাস, বিলোনিয়া মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ বিমল কলই এবং দক্ষিণ জেলার ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অফিসার ডাঃ মনীষ চৌধুরী। রাত দেড়টা নাগাদ ২.৭ কেজি ওজনের একটি পুত্র সন্তানের প্রসব করাতে সমর্থ হন চিকিৎসকরা। উক্ত মেডিকেল টিমে ছিলেন বিলোনিয়া মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ বিমল কলই, স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্নেহাংশু দাস, এনেস্থেসিওলজিস্ট ডাঃ জয়দেব চৌধুরী, সিনিয়র নার্সিং অফিসার স্বপ্না রাণী দেবনাথ, নার্সিং অফিসার সোমা সাহা, সঞ্চিতা সোম, মিঠু মল্লিক, ওটি অ্যাসিসট্যান্ট প্রেমতোষ দত্ত প্রমুখ। মা ও সন্তান দুজনই সম্পূর্ণরূপে সুস্থ রয়েছেন।