
কমল মজুমদার
এই মাসের দ্বিতীয় শনিবার অর্থাৎ ১৪ই জুন নজরুল কলাক্ষেত্রে সম্মিলিত নাট্য প্রয়াসের উদ্যোগে উত্তর ফাল্গুনির নাটক বাসভূমি।
রচনা ইন্দ্রাশীষ লাহিড়ী।
নির্দেশনা মেঘনাদ ভট্টাচার্য।
চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে নাটকের শুরুটা একটা বিশেষ আবহের সৃষ্টি করে। নাটকটির কাহিনীর বক্তব্য অতীত কখনো মরে না, বা হারিয়ে যায় না। এখানে হৈমন্তী এরকম একটা চিন্তা নিয়েই আবার বাড়ি ফিরে আসে। বেশ কিছু বছর আগে সমাজের কিছু বখাটে যুবকের দ্বারা এই হৈমন্তী লাঞ্ছিত হয়। এই কারণে তার বাবা সমাজের কাছে লজ্জার ভয়ে তার ছোট কাকাতো ভাইয়ের কাছে মুম্বাইয়ে হৈমন্তীকে পাঠিয়ে দেয় কিন্তু এখানে হৈমন্তীর বক্তব্যে মুম্বাইয়ে হৈমন্তী নানা ভাবে লাঞ্চিত হয়েছে। তার কাকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। শেষ পর্যন্ত হৈমন্তী প্রচুর প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক করে আর্থ সামাজিক ভাবে একটা উঁচু পজিশনে চলে যায়। তারপর নিজেকে এস্টাব্লিস করে। তারপর সে ওখানকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে মুম্বাই থেকে বাড়ি আসে সমাজের ঐ সব রতন সামন্তের ( যে বখাটে ছেলের দ্বারা আগে লাঞ্ছিত হয়েছে) মত লোক দের শায়েস্তা করার তাড়না নিয়ে। এতে করে যখন বাড়ি আসে তার বাবা তাকে দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। এবং কেন বাড়ি এল সেটা জিজ্ঞেস করে, রাস্তায় কেউ দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করে এবং তার মাও তাকে দেখে সেন্সলেস হয়ে যায়। তারপরেও ওকে ছোট একটি ঘরে থাকার জন্য বলা হয়। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে তার শেকড়কে প্রশ্ন করা হয়। আসলে আমাদের জন্মভূমির টান আমরা কখনো ভুলতে পারি না এবং সেটা হৈমন্তীকে দেখলেই বোঝা যায়। তার ভিতর সমাজের ওইসব বখাটে লোকদের মুখোশ খুলে দিতে সে তৈরি হয়ে রয়েছে। সবসময় চেয়েছে সমাজের পারিপার্শ্বিক দিকের যে শক্তিগুলোর নেতিবাচক ভূমিকা তা তুলে ধরেতে এবং এখানো সমাজে এই ধরনের কিছু লোক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সমাজের ক্ষতি করে, এই বিষয়টিও এই নাটকের উল্লেখযোগ্য প্রতিপাদ্য। এখানে নাটকে বলা হয়েছে আসলে প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য। অভিনয়ের দিক দিয়ে বলতে গেলে সবাই খুব ভালোই অভিনয় করেছে এর মধ্যে অনিমা চরিত্রে রঞ্জিতা দে প্রকৃতই একজন নির্যাতিতা মেয়ের মা। বড় মেয়েও স্বামী পরিত্যক্তা । ছোট মেয়ে ঘরে, সব মিলিয়ে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মার যে অবস্থা ঠিক তাই রঞ্জিতা দে এখানে দেখিয়েছেন অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্যে। আনন্দমোহন চরিত্রে শুভঙ্কর চক্রবর্তী ভালোই করেছে মাঝেমধ্যে আরেকটু সাবলীল হলে আরো ভালো হতো। রেবতী চরিত্রে কাকলী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় নাটকে অন্য মাত্র এনে দেয়। এছাড়া উনার বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন এক্সপ্রেশন এবং কথা বলার ভঙ্গি অসাধারণ, হৈমন্তীর ভূমিকায় অঙ্গনা নন্দি মোটামুটি ভাবে উনার চরিত্র অনুযায়ী তুলে ধরেছে। এছাড়া জয়ন্তীর চরিত্রে শ্যামলীমা বেশ সাবলীল অভিনয় করে গেছেন। বর্তমানে যেভাবে প্রতিটি ঘরে মেয়েরা প্রতিবাদী নারী হিসেবে সরব হয় সেভাবেই তাকে স্বরূপ হতে দেখা গেছে । সে সাবলীল অভিনয় আমাদের উপহার দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে পাড়ার কাকিমার মত চরিত্রে ডালি দিদি অলকানন্দা চৌধুরী বেশ ভালো করেছেন ,মানব দে, অমিত দে,অরুণ পাল, দিবাকর চক্রবর্তী,অঙ্কন ঘটক, আশিষ বিশ্বাস মোটামুটি ওদের চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করে গেছেন।পীযূষ রায়ের পোশাক ও রূপসজ্জা নাট্য অনুযায়ী হয়েছে। মঞ্চ নির্মাণে রাজেশ তার নিপুণতার পরিচয় দিয়েছে। আলো পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ খুব ভালো। আবহ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সৌম্যেন্দ্র নন্দী যথোপযুক্ত ভাবে খুব সুন্দর করে প্রক্ষেপণ করেছেন। পরিশেষে বলা যায় উত্তর ফাল্গুনীর বাসভূমি একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন নাটক, আমাদের দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। উত্তর ফাল্গুনীর
উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।